জাহাঙ্গীর হোসেন ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বারোবাজার মধ্যকার ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেখানে মহাসড়ক ঘেষে রাখা থাকে ছোট,বড় বিভিন্ন ধরনের মটর গাড়ি। এছাড়াও সারাবছর অবাধে চলাচল করে ইঞ্জিনচালিত নিষিদ্ধ নসিমন, করিমন, আলমসাধু। আবার রয়েছে অসংখ্য ইজিবাইক। এ সমস্ত গাড়ির চালকদের কোন প্রশিক্ষন না থাকায় নিয়ন্ত্রন হারিয়ে প্রায়ই ঘটে দূর্ঘটনা। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় পূর্বে এবং বর্তমান সময়ে অনেকবার আলোচনায় এসেছে। কিন্ত এ পর্যন্তই শেষ। বার বার শুধু আলোচনায় হয়। কিন্ত আজও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সাধারন মানুষের ভাষ্য, এ যেন বলার জন্য বলা।
এছাড়া কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা বাসষ্ট্যান্ড হতে চিনিকল গেটের আগ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে মহাসড়কের পাশ ঘেষে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ব্যস্ততম এ অংশটিতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। আবার সড়ক দখলের কারনেই প্রতিনিয়ত যানজটে আটকে যাচ্ছে মালামাল বহনকারী ও যাত্রীবাহী বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। যা প্রতিকার তো হচ্ছেই না বরং মহাসড়কে জট ও জনদূর্ভোগ যেন পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চালের বেশ কয়েকটি জেলার অসংখ্য যানবাহন কালীগঞ্জ শহর ও বারোবাজার মধ্যকার মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করছে।কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা বাসষ্ট্যান্ড থেকে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের প্রধান ফটকের আগ পর্যন্ত অংশে যত্রতত্র গাড়ি রাখা রয়েছে। বিশেষ করে সড়কের দ’ুপাশের অধিকাংশ মটর গ্যারেজ গুলোর সামনে, শহরের পুরাতন ব্রীজ সংলগ্ন সড়কের উত্তর পাশে,আয়েশা খাতুন তেল পাম্পের পশ্চিম পাশে,বৈশাখী তেল পাম্পের পূর্বে মহাসড়কের পাশ ঘেষে অনেক গাড়ি পার্কিং করা রয়েছে।
এছাড়াও নিমতলা বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন ঘোষ মার্কেটের সামনে কোন মটর গ্যারেজ না থাকলেও রাখা রয়েছে অনেক গাড়ি। এগুলোর মধ্যে অনেক গাড়ি রাখা হয় মহাসড়ক একবারেই মহাসড়ক ঘেষে। আর এ গাড়িগুলো যখন সড়কে উঠানো হয় তখন সড়কের দুই পাশে তেমন নজরদারি থাকে না। ফলে দু’দিক থেকে আসা দ্রুতগামী যানবাহনের প্রায়ই ধাক্কা লেগে দূর্ঘটনা ঘটে।
কালীগঞ্জ মেইন ষ্ট্যান্ডের পাশেই প্রতিদিন সকালে সড়কে রাখা হয় বালু ভর্তি ট্রাক। ম্যাক্সি সুপার মার্কেটের সামনে সড়কে করা হয়েছে স্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমনের ষ্ট্যান্ড। সেগুলোও থাকে মহাসড়ক ঘেষে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মেইন বাস্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়ার সময় সীমা থাকলেও যাত্রীবাহী বাসগুলো কাউন্টার ত্যাগ করেও সড়কের উপর অযথা ঝুলাতে থাকে। এ কারনে ওই গাড়ির পেছনে যে আরো অনেক গাড়ি লাইন পড়ে গেছে এটা তারা দেখেও না দেখার ভান করেন। ফলে লোক চলাচল অনিরাপদ হয়ে পড়ে। এ সকল কারনে মহাসড়কের কালীগঞ্জ শহরের অংশ হয়ে পড়েছে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এই সড়ক দিয়ে চলাচলরত সকল যানবাহন যাত্রীরা।
শাহাজান আলী নামের এক ব্যক্তির দাবি, মেইন টার্মিনালে অনেক জায়গা পড়ে থাকে। যাত্রীবাহী বাসগুলো যদি নিয়ন্ত্রণ করে সেখান থেকে যাত্রী উঠানো অথবা নামানো হয় তাহলে যানজট ও ঝুঁকি দুটিই কমে যাবে। বলিদাপাড়ার একাংশে বসবাসরত কবিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন,মহাসড়ক ঘেষা বৈশাখী তেলপাম্পের মোড় থেকে একটি সড়ক আমজাদ আলী মহিলা কলেজ ও ভূষন হাইস্কুলের পাশ দিয়ে বাজারের মধ্যে গেছে। যে কারনে সড়কটি সব সময় ব্যস্ত থাকে।
কিন্ত বৈশাখী এ মোড়টিতে মহাসড়কের কিছু অংশ জুড়েই সারাবছর ট্রাক রেখে দেয়া হয়। ফলে মহাসড়কের সামনে থেকে যে কারনে সামনে থেকে গাড়ি আসছে কিনা দেখা যায় না। ফলে স্থানটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ ও দূর্ঘটনার পয়েন্টে পরিণত হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা আইন শৃংখলা মিটিংয়ে কিছুদিন পর পর আলোচনা করা হয়। কিন্ত সভাকক্ষ ত্যাগ করার পর তা আর কারও মনে থাকে না।
কালীগঞ্জ (বারোবাজার) হাইওয়ে পুলিশের ওসি মিজানুর রহমান জানান, আগে এগুলো দেখে ব্যবস্থা নেয়া হতো। কিন্ত সম্প্রতি সময়ে বেশ কঠিন হয়ে গেছে। তবে মহাসড়কে চলাচলরত ইঞ্জিনচালিত অবৈধ যানবাহন বন্ধে কাজ করেন। তারপরও অনেক সময়ে তাদের চোখ পাখি দিয়ে চলাচল করে থাকে। তিনি বলেন, সমস্যা চারিদিকে, এ সকল যানবাহনে করেই কৃষকেরা এখন তাদের উৎপাদিত কৃষি পন্য বাজারে নিয়ে আসেন। ফলে এ সকল গাড়ি আটকে দিলে কৃষকদের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। ফলে তাদেরকে অনেক সময় মানবিক হতে হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম জানান, আইন শৃংখলা কমিটির মিটিং সব সময় পরিচ্ছন্ন শহরের বিষয়ে কথা হয়। জনসাধারনের জন্য নিরাপদ সড়ক আবশ্যক। অনেক সময় নিজেদের অসচেতনতায় সড়ক অনিরাপদ হয়ে ওঠে। সকলে গাড়ি পার্কিং করার সময় একটু দেখে পার্কিং করলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয় না।
তিনি বলেন, যে কোন ভাবে ঢাকা- খুলনা মহাসড়কের কালীগঞ্জ শহরের অংশ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ সড়কের চেষ্টা করা হবে।
Leave a Reply