1. news@sadhinbanglanews24.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন

❒ ব্যবসায়ীরা টাকা ফেরত চান নতুবা জুলুমবাজের শাস্তির দাবি চুড়িপট্টি থেকে টিএসআই রফিক হাতিয়েছেন অর্ধকোটি চাঁদা ❒ চাঁদা না দিলে ফাঁড়িতে আটকে রাখা হতো, তার ও স্ত্রীর সম্পত্তি ক্রোক, অস্থাবর সম্পত্তি ফ্রিজ

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৩ বার

জাহিদ আহমেদ লিটন:

যশোরের আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা টিএসআই রফিক শুধুমাত্র চুড়িপট্টি থেকে এক বছরে চাঁদা আদায় করেছেন অর্ধ কোটি টাকা। এছাড়া, শহরের হেন কোন স্পট নেই, যেখান থেকে তিনি চাঁদা তুলতে বাদ রেখেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যবসায়ীরা বর্তমানে টাকা ফেরত পাবার দাবিতে পুলিশ প্রশাসনের দারস্ত হচ্ছেন। প্রয়োজনে আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন।

অভিযোগে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে যশোর পুলিশ বিভাগে যে কয়েকজন পুলিশ অফিসার ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যশোর সদর ফাঁড়ির টিএসআই রফিকুল ইসলাম রফিক। পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান যশোরে থাকাকালীন তিনি আশির্বাদপুষ্ট হয়ে দু’হাতে টাকা কামিয়েছেন। খুঁজে খুঁজে ধনী ব্যক্তি, তাদের সন্তান ও ব্যবসায়ীদের তুলে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে তিনি আদায় করেছেন লাখ লাখ টাকা। তার এ অপকর্মের হাত থেকে শহরের কোন ব্যবসায়ী বাদ যাননি। টিএসআই রফিক শুধুমাত্র বাজারের চুড়িপট্টি এলাকার দশজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক বছরে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে লোন অফিসপাড়ায় জমি কেনা ও বাড়ি করার নামে এ টাকা জোরপূর্বক আদায় করেছেন। তানা হলে তাদের তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে রেখে হত্যা করার ভয় দেখিয়েছেন। অসহায় এসব ব্যবসায়ী প্রাণের ভয়ে টিএসআই রফিকের দাবিকৃত টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন।

চুড়িপট্টি এলাকায় চাঁদা প্রদানকারী দশ ব্যবসায়ীর মধ্যে রয়েছেন, মেসার্স সরদার এন্টারপ্রাইজের মালিক মেহেদী হাসান। তিনি প্রাণভয়ে দিয়েছেন তিন লাখ টাকা। রফিকের দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় সাদা পোশাকে তাকে তুলে নিয়ে দু’দিন অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হয়। পরে টাকা দিয়েই তিনি প্রাণে রক্ষা পান। একইভাবে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন মেসার্স আরাফাত স্টোরের মালিক আমিনুল ইসলাম। তিনি দিয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা। মেসার্স মিন্টু স্টোরের মালিক মিন্টু দিয়েছেন নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও এক লাখ টাকার মালামাল। মেসার্স শহীদ স্টোরের মালিক শহিদুল ইসলাম দিয়েছেন তিন লাখ টাকা। তিনি টাকা দিতে না চাইলে তাকেও তিন দিন সদর ফাঁড়িতে নিয়ে আটকে রাখা হয়। তার সাথেও পরিবারের কাউকে দেখা করতে দেয়া হয়নি এবং তাকে আটক করার বিষয়টি অস্বীকার করে পুলিশ।
মেসার্স তারা মিয়া স্টোরের মালিক রফিকুল ইসলাম দিয়েছেন তিন লাখ টাকা, অথৈ সিটি গোল্ড স্টোরের মালিক আমিরুল ইসলাম দিয়েছেন ছয় লাখ টাকা ও এক লাখ টাকার মালামাল। এ টাকা ও মালামাল নেয়ার আগে তাকে তুলে নিয়ে তিন দিন আটকে রাখা হয়। মেসার্স খেলনা ঘরের মালিক তবিবুর রহমান রুমুর কাছ থেকে বাড়ি কেনার নামে নেয়া হয় পাঁচ লাখ টাকা। একই স্টাইলে টিএসআই রফিক চুড়িপট্টি এলাকার আরো কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আদায় করেছেন অর্ধকোটি টাকা। এ কাজে তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন তৎকালীন সদর ফাঁড়ির এসআই মিজান ও এসআই বাবুল। গত ২০১৭ সালে এক বছরে তিনি এ টাকা জোরপূর্বক আদায় করেছেন।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তাদের দোকানে ওই দু’জন দারোগা গিয়ে বলতেন অবৈধ মালামাল রয়েছে। এ কারণে টিএসআই রফিক তাদেরকে ফাঁড়িতে দেখা করতে বলেছেন। এরপর তারা ভয়ে ভয়ে ফাঁড়িতে গেলে রফিক জানাতেন, তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তারা ভারতীয় অবৈধ চোরাচালানের মালামালের ব্যবসা করছেন। এ কারণে তাদেরকে ভালোভাবে ব্যবসা করতে হবে, নতুবা তাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। এসময়ে তিনি নানা অজুহাত দেখাতেন। বলতেন তিনি বাড়ির কাজ করাচ্ছেন, এ জন্য টাকার প্রয়োজন। অথবা আপনাদের এলাকায় প্রতিবেশী হচ্ছি জমি কিনেছি, এ জন্য টাকার প্রয়োজন। এ কাজে তাকে একটু সহযোগিতা করতে হবে। তার এসব কথা শুনে কেউ টাকা দিতে গড়িমসি করলে তাকে এসআই মিজান ও বাবুল দোকান থেকে তুলে নিয়ে যেতেন। এরপর তাদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যেতো না। পরে টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে হাজির হলে তাদের খোঁজ মিলতো।

বর্তমানে দিন বদলে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যবসায়ী একত্রিত হয়েছেন, তারা তাদের টাকা উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসনের দারস্থ হবেন। ইতিমধ্যে তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে স্মারকলিপি ও মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তারা বলেছেন, হয় তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক নেয়া টাকা ফেরত দিতে হবে, নতুবা জালেম টিএসআই রফিককে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যাতে পুলিশ প্রশাসনের আর কেউ এ জাতীয় অত্যাচার করতে সাহস না পায়।

এ বিষয়ে মেসার্স সরদার এন্টারপ্রাইজের মালিক মেহেদী হাসান বলেন, তিনি টিএসআই রফিকের দাবিকৃত টাকা প্রদানে দেরি করায় তাকে তুলে নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে রাখা হয়। এরপর তার স্ত্রী ধারদেনা করে তিন লাখ টাকা ম্যানেজ করে রফিককে দেয়ার পর তিনি মুক্তি পান।
তিনি বলেন, টিএসআই রফিকের চাঁদাবাজি ও নির্যাতনে চুড়িপট্টিতে ঠিকমত ব্যবসা করার উপায় ছিলো না। তার এ অত্যাচার থেকে চুড়িপট্টির কোন ব্যবসায়ী মুক্তি পাননি। সবাইকে চাঁদা দিয়েই ব্যবসা করতে হয়েছে। তাদের প্রতিবাদ করার কোন জায়গা ছিল না। তিনি তার কষ্টে উপার্জিত টাকা ফেরত ও টিএসআই রফিকের শাস্তির দাবি জানান।

এদিকে, একই স্টাইলে শহরময় চাঁদাবাজি চালিয়েছেন সদর ফাঁড়ির টিএসআই রফিক। একইসাথে বিপুল পরিমান এ টাকায় বিভিন্ন স্থানে কিনেছেন জমি ও বাড়ি। যা পরবর্তীতে দুদকের তদন্তে উঠে আসে। এরই প্রেক্ষিতে রফিক ও তার স্ত্রী ঝরনা ইয়াসমিনের নামে স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও অস্থাবর সম্পত্তি ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের উপপরিচালক মোশারফ হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে যশোরের সিনিয়র স্পেশাল জজ নাজমুল আলম এ আদেশ দিয়েছেন। টিএসআই রফিক বর্তমানে ফরিদপুর জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

সূত্র জানায়, দুদকের কাছে প্রথমে টিএসআই রফিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর স্বামী-স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসেব চাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে অমিল পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে বিপুল সম্পত্তির ফিরিস্থি। দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে সারাদেশে রফিক দম্পতির সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জ জেলায় সাততলা ভবন, যশোর শহরে একটি ছয়তলা বাড়ি, একটি দুইতলা মার্কেট, একটি দুইতলা ভবন, ঢাকায় ফ্লাট, রাজশাহী শহরে বাড়ি, খুলনায় জমি ও ফ্লাট। যশোরের পাগলাদাহ গ্রামে জমি ও গরুর খামারসহ আরো কয়েকটি এলাকায় বাড়ি ও জমি।
এসব বিষয়ে জেলা পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে কেউ অফিসিয়াল বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তারা টিএসআই রফিকের এ জাতীয় অবৈধ কর্মকান্ড অবগত রয়েছেন বলে জানান।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

আর্কাইভ

December ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Jan    
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  

স্বাধীন বাংলা নিউজ 24.com limited কর্তৃক প্রকাশিত।

Theme Customized By BreakingNews