1. news@sadhinbanglanews24.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫০ পূর্বাহ্ন

যশোরের বৃহত্তর বাগদি পল্লী ওদের ভাগ্যে জোটেনা গরম কাপড় #দু’মুঠো খাবারের জন্য সংগ্রাম করেই বেচেঁ থাকা

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৫
  • ১১ বার

মিজানুর রহমান, (যশোর) ॥
ওরা বাগদি। দুবেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য সংগ্রাম করেই বেচেঁ থাকে তারা। সমাজের আর দশজনের ন্যায় সব জায়গায় মিশতে পারেনা তারা। গ্রামের চায়ের দোকানে রয়েছে তাদের আলাদা চায়ের কাপ।বাপ দাদার পৈত্রিক পেশা মাছ ধরা। কিন্তু খাল বিল সব সমাজের প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ার কারণে মাছের পরিবর্তে শামুক, কুচেঁ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছে তারা।

এ কথায় জীবনের মৌলিক অধিকার ছাড়ায় বসবাস করে আসছে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের জগহাটি গ্রামের সবচেয়ে বড় বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষ গুলো । শুধু মাত্র ওরা বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ায় সমাজ থেকে অবহেলিত থাকে। এই হাড় কাঁপানো শীতে প্রায় অর্ধলাঙ্গ মানুষ গুলো বেঁচে থাকার তাগিদে পানিতে গলা ডুবিয়ে মাছের পরির্বতে শামুক,কুঁচে,ধরে কোন রকম বেঁচে আছে। শীতে জবুথবু এসব মানুষ গুলোর ভাগ্যে জোটেনা এক টুকরা গরম কাপড়। খোঁজ নেয় না কোন রাজনৈতি নেতা,বা সরকারী কোন কর্মকতা । শীত নিবরণের একমাএ উপায় হল খড়ের আগুন । সভ্য যুগেও যে মানুষ আদিম যুগের ন্যায় বসবাস করতে পারে তা এদের না দেখলে কোউ বিশ্বাস করতে পারবে না ।

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের জগহাটি গ্রামে বসবাস করে প্রায় ৪০০ টি বাগদি সম্প্রদায়ের পরিবার । যে পরিবার গুলোতে বসবাস করে প্রায় ১২০০ মানুষের বসবাস । যশোর সদর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় বাওড়টি জগহাটি গ্রামে হওয়ায় এই পরিবার গুলোর পূর্ব পুরুষ গন বহু বছর আগ থেকে এখানে তাদের বসবাস শুরু করে । এই পরিবার গুলোর প্রধান আয়ের উৎস ছিল জগহাটি বাওড় সহ এলাকার বিভিন্ন খাল বিলে মাছ ধরা জীবিকা নির্বাহ করা।

তাইতো জগহাটি গ্রামের বাওড় পাড় ঘেষে এই পরিবার গুলো তাদের বসবাসের জন্য ছোট ছোট কুড়ে ঘর বানিয়ে সেখানেই যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। এক সময় তারা এই বাওড় থেকে মাছ ধরে এলাকার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে ভাল ভাবেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো । কালের বির্বতে বিভিন্ন ক্ষমার লোভী মানুষ গুলোর নজর পড়ে এই বাওড়ের দিকে ।

তাছাড়া এলাকার খাল বিলে পানি না থাকা এবং সেখানে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ শুরু করায় এই বাগদি সম্প্রদায়ের কপাল পোড়ে । নামে বাওড়টি বাগদি সম্প্রদায়ের হলেও প্রভাবশালীরা বাওড়টিতে নিজেদের নামে ইজারা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করে আসছে বছরের পর বছর । মূলত তখন থেকেই বাগদি পরিবার গুলোতে দেখা দেয় চরম হতাশা। বাওড়ে মাছ ধরতে না পেরে ক্ষুধার যন্ত্রনায় তারা নেমে পড়ে জীবন যুদ্ধে। বেচে থাকার তাগিদে তারা আদি পেশা মাছ ধরা ছেড়ে বেছে নেয় শামুক, কুঁচে,ধরে জীবন চলার মত পেশা। সরেজমিন জগহাটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পযর্ন্ত পুরুষের পাশাপাশি নারীরা এলাকার বিভিন্ন খাল বিলে এই প্রচন্ড শীতে গলা ডুবিয়ে ডুবিয়ে শামুক সহ কুঁচে ধরে বাড়িতে আনছে । পরে সে গুলো বিত্রিু করে নিজেদের খাবার যোগাড় করছে । যেটা রীতিমত অনেকটা যুদ্ধের মত।

শীত আসলে এই পল্লীর মানুষ গুলোর দুঃখের শেষ থাকে না । শীতের কাপড়ের অভাবে তারা সারা রাত জেগে খড়ের আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্ঠা করে থাকে । হরবালা (৬৫)নামের এক মহিলা মনের কষ্ঠে বলেন, সরকার আসে সরকার যান শুধু পরির্বতন ঘটেনা আমাদের ভাগ্যের । তিনি আরো বলেন, ভোটের সময় আসলে রাজনৈতিক নেতারা আমাদের ভাগ্যের পরির্বতনের কথা বলে ভোট লুফে নেয় । এর পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না । হারান (৭০) জানায়, এলাকায় খাল বিল না থাকায় মোরা বাধ্য হয়েই বাপ দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছি । তাছাড়া আমরা কৃষি কাজ করতে না পারায় আমাদের কেউ কাজে নেয় না । সকাল হলে দলে দলে নারী পুরুষ ও শিশুরা শামুক ও কুঁচে ধরতে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়ে । যা দেখে মনে হয় এরা যে যুদ্ধের সৈনিক । সারা দিন যা পায় তা নিয়ে আসে বাড়িতে । একাধিক বাগদি সম্প্রদায়ের ব্যক্তি জানান,প্রতি কেজি শামুক বিত্রিু করে থাকে ৫/৬ টাকা করে । হারান নামের এক বাগদি জানায়, সারা দিনে ৮/১০ কেজি শামুক পাওয়া যায় । যা বিত্রিু করে কোন রকম জীবন চলে ।

আবার অনেকে বাওড় থেকে মাছ কিনে মহিলারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিক্রি করে চাল কিনে বাড়িতে নিয়ে যায় । সারা দিন যে মানুষ গুলো খাদ্যর জন্য যুদ্ধ করে বাড়িতে ফিরে আবার নতুন করে তাদের শুরু করতে হয় নতুন যুদ্ধ । রাতে এই হাড় কাঁপানো শীতে ঘুমানোর পরিবর্তে খড়ের আগুন জ্বালিয়ে সারা রাত জেগে থাকতে হয় । মালতি রানী জানায়, শীত নিবরণের জন্য কোন গরম কাপড় না থাকায় ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে তারা পুরো শীত মওসুম জুড়ে রীতিমত যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে । মন কষ্ট নিয়ে একাধিক ব্যক্তি জানান, পত্রিকায় লিখে কি লাভ হবে ।

বহু বার তো লিখলেন আমাদের ভাগ্যের কোন পরির্বতন হয় না। এক সময় দৈনিক গ্রামের কাগজের সংবাদ দেখে যশোরের সাবেক এক ডিসি এদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছা করলেও অতি সল্প সময়ে তিনি যশোর থেকে বদলি হওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। এর পর সরকারী ভাবে আর কেউ কখনো নেয়নি এদের খবর । এলাকার সচেতন মানুষের অভিমত কেবল মাত্র পেশা পরির্বতনের মাধ্যমেই এদের ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব। বিভিন্ন সরকারী চাকুরিতে কোটা ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার ও দাবি জানান, এলাকাবাসি । এখাকার মানুষ গুলোর সমাজের বিত্তমান মানুষের নিকট একটায় আকুতি বাগদি বলে তাদের অবহেলা না করে তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে সকলেই ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

আর্কাইভ

January ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Dec    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  

স্বাধীন বাংলা নিউজ 24.com limited কর্তৃক প্রকাশিত।

Theme Customized By BreakingNews