জীবন বাঁচাতে মানুষ আবহমানকাল থেকে খাদ্যের উপর নির্ভরশীল। সেই খাদ্যে যদি ভেজাল কিংবা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদন করা হয়,সেই খাদ্য তখন অখাদ্যে পরিণত হয়।
ভেজাল খাদ্য জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। আমাদের বাঁচার শেষ ভরসাটুকু কোথায় পাবে মানুষ। কে দেবে এই সকল প্রশ্নের সমাধান।এমন প্রশ্ন কাউখালী সাধারণ মানুষের।
সাম্প্রতিককালে কাউখালী উপজেলায় বিভিন্ন বেকারীতে খাদ্য উৎপাদনের পরিচ্ছন্নতার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। এমনকি স্বাস্থ্য ও নিরাপদ খাদ্য আইন না মেনে নিয়ম ভঙ্গের প্রযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে এ কারণে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত দেবনাথ বেকারীগুলোতে অভিযান চালিয়ে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে নোংরা, পাখির বিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম স্বচক্ষে দেখতে পান অথচ এ সময ওই কারখানার মালিকগণ বিএসটিআই ও সিভিল সার্জন অফিসের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর প্রদত্ত সনদ প্রদর্শন করায় কারখানা সিলগালা করতে পারেনি।
অথচ নিরাপদ খাদ্য আইনের লাইসেন্স পাওয়ার শর্তগুলো পূরণ করা ছাড়াই পেয়েছে সনদপত্র। তবে কারখানা থেকে ক্ষতিকর কেমিক্যাল জব্দ করে এবং নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার উৎপাদন করায় কয়েকটি কারখানাকে ভোক্তা আইনে ২ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ দন্ড প্রদান করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এই সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশের পর গত ১৩ জানুয়ারি উপজেলার মেসার্স মিজান বেকারী পরিদর্শন করেন বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ।
এ সময় কারখানার পন্য উৎপাদনের জন্য মিক্সার মেশিন অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পাওয়া যায়। কারখানার ফ্লোর স্যাতস্যাতে, কাঁচামাল এবং উৎপাদিত পণ্য উন্মুক্ত অবস্থায় যেখানে সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কারখানার অভ্যন্তরে অপ্রয়োজনীয় কাপড় ও পাটের বস্তা যত্রতত্র পরিলক্ষিত হয়। কারখানার শ্রমিকদের ব্যবহৃত টয়লেট খুবই নোংরাসহ বিভিন্ন অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়।সে কারণে মিজান বেকারীর স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমানকে সংশোধন হয়ে নিরাপদ খাদ্য আইন মোতাবেক খাদ্য উৎপাদনের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে নোটিশ প্রদান করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের বরিশাল বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান।
নিরাপদ খাদ্য আইন মেনে খাদ্য উৎপাদন করার জন্য সকল বেকারী মালিকদের নির্দেশনা দেয়া হলেও আজ পর্যন্ত অধিকাংশ কারখানার মালিক নির্দেশনার সিকি ভাগও মানছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় এসব বেকারীর খাদ্য পণ্য ক্রেতা কালাম সিকদার, বেলাল হোসেন, আব্দুল মালেক সহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন বেকারীর খাদ্য পণ্যের মান পূর্বের তুলনায় অনেক নিম্ন মানের, যা খেলে পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন ধরণের রোগের দেখা দেয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত দেবনাথ তিনি বেকারীগুলোতে অনিয়মের জন্য কয়েকবার অভিযান চালিয়ে অর্থদন্ড করে সতর্ক করেছেন বলে স্বীকার করেন। তবুও থামছে না তাদের এই নোংরা পরিবেশে খাদ্য উৎপাদন। শিল্প মন্ত্রণালয় বিএসটিআই এর নীতিমালা অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদনের লাইসেন্স পেতে হলে পাখি, পোকা-মাকড় ঢুকতে না পারে তার জন্য কারখানায় সুখ নেট ব্যবহার করতে হবে, মেশিণগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, কারখানার মেঝে পাকা থাকতে হবে, কারখানার ভিতরে কাঁচামাল রাখার জন্য কাঠের উঁচু মাচা থাকতে হবে, শ্রমিকরা জুতা পায়ে কারখানায় প্রবেশ এবং কাজ করতে পারবে না। পণ্য উৎপাদনের সময় মাথায় টুপি, গায়ে এপ্রোন পড়তে হবে। সর্বোপরি খাদ্য উৎপাদনের জন্য পরিবেশের সকল নিয়ম মেনে খাদ্য উৎপাদন করলে লাইসেন্স প্রদান করার কথা শিল্প মন্ত্রণালয় বিএসটিআই এর। অথচ অধিকাংশ কারখানাগুলোতে এসব কিছু না মেনেই লাইসেন্স পেয়ে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বজল মোল্লা বলেন, বিধি বহির্ভূতভাবে কোন বেকারী খাদ্য উৎপাদন করার চেষ্টা করলে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply