1. news@sadhinbanglanews24.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

সাগরদাঁড়িতে দত্ত বাড়ির নিদর্শনগুলো সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে 

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫
  • ১৮ বার
পরেশ দেবনাথ, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি 
বাংলা সাহিত্যের অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ তীরের সাগরদাঁড়ির দত্তবাড়ির প্রাচীন নিদর্শনগুলো সংস্কার না করায় নষ্ট হতে চলেছে। কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে সাগরদাঁড়ির দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। কবি মধুসূদনের জমিদার বাড়িটি ৪ একর ৩৩ শতক জমির উপর অবস্থিত। ছোট-বড় ৫টি স্থাপনা, মন্দির ও পুকুরঘাট সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। অতিথিদের বিশ্রামের জন্য নির্মিত ডাক বাংলোটি বহুকাল আগে ভেঙে ফেলা হলেও তা নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।
১৮৬৫ সালে পাকিস্থান সরকার কবি ভক্তদের থাকার জন্য চার শয্যা বিশিষ্ট একটি রেস্টহাউজ নির্মাণ করে। এই রেস্ট হাউজের একটি রুমেই করা হয় পাঠাগার। ১৯৬৬ সালে কবির বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে সরকার ন্যস্ত করে। কবির জন্মস্থানখ্যাত ঘরটি এখন আর নেই। কবির বাড়ি সংলগ্ন আবক্ষ মূর্তিটি কলকাতার সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক স্থাপন করে দেয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জমিদার বাড়ি, পুকুর সংস্কারসহ পুরো এলাকাটি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলে।
কপোতাক্ষ নদীর কুলে কবি সস্ত্রীক সাত দিন অবস্থান করেছিলেন। সেখানে একটি পাথরে খোদাই করে লেখা আছে ‘শতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে’। এই জায়গাটি বিদায়ঘাট নামে খ্যাত। ১৯৯৮ সালে এর পুনঃসংস্কার কাজ শুরু হয়। ২০০১ সালে কাজ শেষ হয়। এরপর আর সংস্কার করা হয়নি। দীর্ঘ দিনেও দত্তবাড়ি, মন্দির, প্রাচীন নিদর্শনগুলো পুনঃসংস্কার না হওয়ায় এর জানালা, দরজা ভেঙে যাচ্ছে। ছাদেও ফাটল ধরেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সংরক্ষিত আসবাবপত্রগুলো। ছোট-বড় ৫টি স্থাপনা, মন্দির ও পুকুর ঘাট এ মুহূর্তে সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
মধুপল্লীর জায়গা স্বল্পতার কারণে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাসহ পিকনিক কর্নার নেই। স্যুভিনির সপ, ক্যাফেটেরিয়া, পিকনিক পার্টির জন্য ভালো মানের টয়লেট, ফ্যাসেলিটি, দর্শনার্থীদের বসার জন্য চেয়ার, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও বিশ্রামাগার নেই।
মধুমেলায় আগত অতিথিদের বিশ্রামের জন্যে নির্মিত ডাক বাংলোটি ২০০৬ সালে ভেঙে ফেলা হলেও আজও তা নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আগত অতিথিদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সাগরদাঁড়িতে প্রচুর দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। ২০১৮ সালের ১০ জুন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিখিল রঞ্জন রায় স্বাক্ষরিত এক স্মারকে সাগরদাঁড়ির পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান উন্নয়ন কাজের জন্যে ১ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ টাকায় মহাকবির আধুনিক ভাস্কর্য, সমাধিলিপি প্রতিস্থাপন, অনশনস্থলে কাঠ বাদাম গাছের শ্রী বৃদ্ধি, বিখ্যাত কবিতা অবলম্বনে টেরাকোটা দিয়ে কাহিনী চিত্র ওয়াল ও ওয়াস ব্লক নির্মাণের জন্যে ওই বরাদ্দ দেওয়া হয়। অজ্ঞাত কারণে বরাদ্দের কাজ হয়নি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাকির হোসেন জানান, ‘আমি নতুন এসেছি। উক্ত টাকার কাজ হয়েছে কিনা তা জানি না।’
একটি সূত্র জানিয়েছে, বরাদ্দকৃত ওই টাকা যিনি দিয়েছিলেন সেটা সঠিকভাবে প্রদান করা হয়নি বলে উন্নয়ন কাজ হয়নি। তবে বিগত সরকার প্রায় ৬ কোটি টাকার একটি আধুনিক বিশ্রামাগার নির্মাণসহ মধুপল্লীর অনেক উন্নয়ন করেছে। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে এই মুহূর্তে কবির বাসগৃহসহ ৫টি ভবন সংস্কার, স্যাঁতসেতেভাব দূরীকরণে রঙ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
২৫ জানুয়ারি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সাগরদাঁড়িতে বসেছে ৭ দিনব্যাপী মধুমেলা। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যকটদের আগমন ঘটবে সাগরদাঁড়িতে। এর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও – সাগরদাঁড়িতে আসছে বনভোজনের জন্য।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মধুপল্লীর মিউজিয়ামের দ্বায়িত্বে বিনা পারিশ্রমিকে থাকা হাসানুজ্জামান (৬৫) জানান, আমি এখানে ৩৪ বছর ধরে কাজ করছি। মধুমেলায় প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ লাখ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে থাকে। নানা সমস্যার কারণে পর্যটকরা দিনের আলো থাকতেই ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, দীর্ঘদিনেও আমরা মাইকেল মধুসূদনকে ভালোভাবে তুলে ধরতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষণ করছে। প্রাচীন স্থাপত্য ও নিদর্শনগুলো ক্রমে ক্ষয়ে যাচ্ছে। এটি সংস্কার ও নান্দনিক করে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

আর্কাইভ

January ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Dec   Feb »
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  

স্বাধীন বাংলা নিউজ 24.com limited কর্তৃক প্রকাশিত।

Theme Customized By BreakingNews