তানভির আহাম্মেদ (আবির)
ঈদের ছুটির পর চৈত্র সংক্রান্তির পাঁচনকে ঘিরে হরেক রকমের সবজিতে ভরপুর বাজার। তবে হাতে গোনা কিছু সবজির দাম কমলেও বেশির ভাগই বাড়তির দিকে। গেল রমজানজুড়ে নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে সবজির দাম হাতের নাগালে থাকলেও ঈদের পর ফের অস্থির হয়ে উঠেছে বন্দরনগরীর কাঁচা বাজার। ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রায় সবজি। এগুলোর মধ্যে আবার ঝিঙে, সজনে ও কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে।
তবে ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজানের মতো তদারক সংস্থাগুলোর কড়া তদারকি না থাকায় দাম বাড়ছে সবজির। দৌরাত্ম্য বেড়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদেরও।চট্টগ্রাম নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের দরে বিক্রি হচ্ছে টমেটো ১৫-২০ টাকা, ফুলকপি ৩০-৪০ টাকা, বাঁধাকপি ১৫ টাকায়, চালকুমড়া (আকারভেদে) ৪০-৫০ টাকায়, কাঁচা কলা ২৫-৩০ টাকা হালি, পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা, করলা ৫০-৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০-৭০ টাকা, লেবু ২৫-৩০ টাকা হালি, ধনেপাতা ও মিষ্টি কুমড়া ২৫-৩০ টাকায়। বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৬৫ টাকা, মূলা ৬০-৭০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা, কাকরোল ৯০ থেকে ১৪০ টাকা, শিম ৬০-৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৫৫-৮০ টাকা ও পটল ৫০-৭০ টাকায়। এছাড়া লালশাক, কলমি শাক, পুইশাক কিংবা পালং শাক এক আঁটি ১০-২০ টাকায়।
সবজির বাড়তি দামের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অক্সিজেন এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, শীতকালীন সবজি এখন নেই। তাই দাম বেড়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজিও পুরোপুরি আসেনি বাজারে। তাই আগাম যা এসেছে একটু দাম বেশি। তাছাড়া ঈদের বন্ধে পরিবহনেও একটু সমস্যা হয়েছে। তার প্রভাবও পড়েছে।মাছ-মাংসের বাজারে দেখা যায়, আকারভেদে রুই মাছ ২৭০-৩৫০ টাকা, মৃগেল ২২০-২৫০ টাকা, কারপু ২শ-২২০ টাকা, পাঙাশ ১৫০-১৬০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৬০, কাতল ৪শ-৪৫০ টাকা, শিং ৩শ-৪শ টাকা, সিলভার কার্প ১৫০-২৫০ টাকা এবং গছিমাছ ৮শ-১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকা, পাকিস্তানি সোনালি মুরগি ২৭০-২৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৫শ-৫৫০ টাকা এবং পাকিস্তানি লেয়ার ৩শ-৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কেজি প্রতি গরুর মাংস ৭২০-৭৫০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার-১১শ টাকা।এদিকে, পেঁয়াজেরও দাম বেড়েছে ঈদের পর। সপ্তাহের ব্যবধানে জাতভেদে ৫-১৫ টাকা বেড়েছে পণ্যটির দাম। মেহেরপুরী পেঁয়াজ ৩০ ও বারি পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।
অপরিবর্তিত রয়েছে রসুনের দাম। ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি।ক্রেতা ফয়সাল বলেন, ‘শীতের মৌসুম শেষ হওয়ায় সবজির দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। সবজি বাড়তি দামে কিনছি। এক সপ্তাহের তুলনায় পরের সপ্তাহ কিছুটা বাড়ে, আবার কিছুটা কমে। কিন্তু সবজির দাম প্রতি সপ্তাহে কিছুটা বাড়তে বাড়তে কত টাকায় গিয়ে পৌঁছেছে, তা দেখতে হবে। এছাড়া সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে বাড়তি দরে। এগুলো সরকারকে দেখতে হবে। নতুবা রমজানের বাজারে সরকার যে সুনাম অর্জন করেছে, তা কয়েক সপ্তাহে মানুষ ভুলে যাবে।’কর্ণেলহাট বাজারের মুদি দোকানি শিবু বলেন, ‘এখন যা আছে তা পাঁচ-দশ টাকা বাড়তিতেই বিক্রি করতে হচ্ছে। সাপ্লাই নাই।
কয়েকদিন পর তেল পাবো কিনা সন্দেহ আছে। এজন্য প্রশাসনের কাজ করতে হবে। আমাদের মতো দোকানদারদের অভিযানের জালে না ফেলে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাপ্লাই চেইন দেখা জরুরি বলে মনে করি।’তবে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইনের দাবি, ঈদের পর তদারক সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দৌরাত্ম্য বেড়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদেরও।
তিনি বলেন, রমজানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বাজার তদারক সংস্থাগুলো যেভাবে সক্রিয় ছিল এখন আর সেরকম নেই। তাদের নিষ্কিয়তার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া ব্যবসায়ীদেরও সচেতন হওয়ার বিষয় আছে। চোর-পুলিশ খেলে তো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এখন আবার মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে, তাদের ঠেকাতে কৃষকদের সরাসরি পণ্য বাজারজাতকরণের সুযোগ তৈরি করতে হবে ।এদিকে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, নানা কারণে সবজির দাম বাড়ছে। ঈদের ছুটিতে একটু সমস্যা হয়েছে। প্রতিদিন অভিযান চলছে, কাঁচা বাজারেও আমাদের নজর আছে। অন্যায়ভাবে কেউ বাজার অস্থিতিশীল করলে ব্যবস্থা নেবো।
Leave a Reply