মো:ইমদাদুল হক, বিশেষ প্রতিনিধি:
ঢাকার আশুলিয়ায় লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় কর্মরত ও বসবাসরতদের ‘টার্গেট’ করে কোনো প্রকার আবেদন ছাড়া লাইসেন্স বিহীন এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসে প্রতারিত হচ্ছেন পোশাক শ্রমিকসহ এখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার থেকে প্রাপ্ত ‘ অননুমোদিত প্রাইভেট ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর হালনাগাদ তথ্য’ অনুযায়ী সরেজমিন অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ তথ্য।
আশুলিয়ার বাইপাইলের বুড়ির বাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালিয়ে আসছেন আবু সুফিয়ান এর মালিকানাধীন ফাতেমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অথচ সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানটি ‘আবেদনকৃত’ নয় এবং স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে এর লাইসেন্সও নাই। অর্থাৎ এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
ফাতেমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে সেখানে কর্তব্যরত এক নারী উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের ভাইয়ের সাথে মোবাইলে কথা বলতে বলেন। তখন ওয়াহিদ নামের একজন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলেন।তিনি জানান, আমাদের কাগজপত্র এখনো হয় নাই, বিগত সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই আমরা এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি চালাচ্ছি।
আশুলিয়ার নয়ারহাট বাসস্ট্যান্ড (আমগাছিয়া) এলাকায় রয়েছে ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর মালিক হলেন ডা: আল-আমীন। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা’র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি’র ও লাইসেন্স নাই।সরেজমিন ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে সেখানে কর্তব্যরত এক মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট জানান, তাদের কাগজপত্র এই প্রতিষ্ঠানের মালিক ডা: আল-আমিন এর কাছে। তিনি এখন ঢাকায় আছেন।
মুঠোফোনে ডা: আল-আমিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, লাইসেন্স ছাড়াই কীভাবে তিনি স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছেন? এব্যাপারে তিনি জানান, তাদের সকল কাগজপত্রসহ তিনি আবেদন করেছেন, শুধু লাইসেন্স এর নাম্বার এখনো পান নাই। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার থেকে পাওয়া তথ্যে তার প্রতিষ্ঠানটি অননুমোদিত তালিকায় কীভাবে গেলো সেটা তার বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ তৌহিদ আল হাসান জানান, অবশ্যই যাদের লাইসেন্স নাই সেসব প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে না। আর বিনা লাইসেন্সে যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলা ও গাফিলতিতে গত ৭ জানুয়ারি শিশু আয়ান মারা গেলে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে সারা দেশ। পরে ১৫ জানুয়ারি আয়ানের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে ৭ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে সারাদেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত বা অনুমোদনহীন কত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে– সে বিষয়েও একটি প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। গত ২৫ জানুয়ারি সেই প্রতিবেদন জমা দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ।
নতুন তালিকায় দেখা গেছে, ১ হাজার ২৮৫টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধভাবে চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ৪১৫টি অবৈধ প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিভাগে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তা এবং কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে অবৈধভাবে এসব ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল চলছে। শুধু এসব হাসপাতাল বন্ধ করলেই যথেষ্ট হবে না, নিয়মিত তদারকি ও করতে হবে।
Leave a Reply