নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে মতবিরোধ ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। একসময় স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক কাতারে দাঁড়ানো দলগুলো এখন পরস্পরের বিরোধিতায় ব্যস্ত। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিভাজনের মূল কারণ দায়িত্বহীন আচরণ এবং পারস্পরিক অশ্রদ্ধা। আর এই ধারা অব্যাহত থাকলে সামনে দেশকে দিতে হতে পারে বড় মূল্য।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যে প্ল্যাটফর্মে একসঙ্গে ভিড়েছিল বিভিন্ন মত ও পথের রাজনৈতিক শক্তি, সেখানে এখন দেখা যাচ্ছে বিপরীত সুর। ক্ষমতা ও স্বার্থের লড়াই এখন প্রকাশ্য। ফ্যাসিবাদবিরোধী জোটগুলোর সংগঠনও দুর্বল হয়ে পড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে রাজপথের আন্দোলনে। নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেও বিরোধ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাত্র ১০ মাসেই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী রাজনৈতিক দলগুলোরই ব্যর্থতা। অভ্যুত্থান-পরবর্তী নেতৃত্ব দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি। রাজনৈতিক পরিপক্বতা দেখাতে না পারা বড় দলগুলোর জন্য একটি গুরুতর ব্যর্থতা বলেও মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদরুদ্দিন ওমর বলেন, “যখন একটি দল ক্ষমতায় থাকে, তখন বিরোধী দলগুলোকে সামাল দেওয়ার সক্ষমতাও তাদের থাকতে হয়। কিন্তু ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে এটি সম্ভব হচ্ছে না। এতে একটি সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।”
রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার আরও সরাসরি বিএনপিকে দায়ী করে বলেন, “ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়, এমনকি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তার জন্য শতভাগ দায়ী থাকবে বিএনপি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০-পরবর্তী বাংলাদেশ যে গণতান্ত্রিক স্বপ্ন দেখেছিল, তা আবারও বিশ্বাসঘাতকতার মুখে। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পরও যদি সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন না হয়, তবে দেশের ভবিষ্যৎ হবে আরও অন্ধকারময়।
ফরহাদ মজহার বলেন, “লুটেরা-মাফিয়া নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রেখে দলগুলো কেবল নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। এতে তারা সরকারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে, যা গণআন্দোলনের উদ্দেশ্যকে বিভ্রান্ত করছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “আলাদাভাবে নয়, সবাইকে একসঙ্গে বসিয়ে সমস্যার ফারাক খুঁজে বের করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।”
ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন ও তাদের কার্যক্রম নিয়েও রয়েছে সমালোচনা। বিশ্লেষকদের মতে, সদ্য গঠিত এই দল আচরণে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও দায়িত্বহীন, যা পুরনো ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলোর সুযোগ কাজে লাগানোর পথ করে দিচ্ছে।
ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “মাত্র তিন মাসের একটি দল এখন ক্ষমতাসীন দলের মতো আচরণ করছে। যাকে ইচ্ছা তাকে হুমকি দিচ্ছে, কখনও কখনও মব আচরণও করছে।”
বদরুদ্দিন ওমর বলেন, “এই ছাত্ররা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের কথাবার্তা এখন প্রতিক্রিয়াশীল। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক।”
সম্প্রতি চলমান আন্দোলন, দলগুলোর বৈপরীত্যপূর্ণ অবস্থান ও দাবিদাওয়া ঘিরে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।
ফরহাদ মজহার বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণ বিজয়ের দিকে না নিয়ে গিয়ে যদি দলগুলো কেবল নির্বাচনে মনোযোগ দেয়, তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ড. ইউনূসকে অরক্ষিত রেখে সেনা-সমর্থিত সরকার গঠন করে নির্বাচন দাবি করাটা একধরনের রাজনৈতিক ভ্রান্তি।
Leave a Reply