কাগজ ডেস্ক,
নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন আজ, ২৮ জুন। ১৯৪০ সালের এই দিনে তিনি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীর বথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা দুলা মিঞা সওদাগর এবং মা সুফিয়া খাতুন। স্ত্রী অধ্যাপক দিনা আফরোজ এবং দুই কন্যা রয়েছেন তার পরিবারে।
জন্মদিন উপলক্ষে ড. ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার একটি ছবি শেয়ার করে তিনি লেখেন, “শুভ জন্মদিন, স্যার। আপনার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার জীবনের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।”
ড. ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেন। ক্ষুদ্রঋণ ও দরিদ্রদের ক্ষমতায়নের মডেল হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংক আজ বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে অনুসরণীয়।
ছাত্রজীবনে ড. ইউনূস ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। চট্টগ্রাম কলিজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ৩৯ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬তম স্থান লাভ করেন। এরপর চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন। পরে টেনেসির মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক কমিটি গঠন করে ‘বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার’ পরিচালনা করেন, যা আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে ড. ইউনূস দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে ‘গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্প’ চালু করেন। ১৯৭৬ সালে জোবরা গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প শুরু করেন, যা ১৯৮৩ সালে পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকে রূপ নেয়। আজ বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে এই ব্যাংকের কার্যক্রম বিস্তৃত, এবং বিদেশেও তার মডেল অনুসরণ করা হয়।
নোবেল ছাড়াও ড. ইউনূস ২০০৯ সালে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ এবং ২০১০ সালে ‘কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল’সহ বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। দেশে তিনি ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননায় সম্মানিত হন।
২০২৪ সালে জুলাইয়ে ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। বর্তমানে তিনি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
Leave a Reply