মো. রুহুল আমীন নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি :
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘরের জলে ও ডাঙায় জমে উঠেছে শত বর্ষের ঐতিহ্যবাহী নয়নাভিরাম নৌকার হাট। উপজেলার পর্ব প্রান্তের সীমানার আটঘরের খালে ও জলে প্রায় আধা কিলোমিটার জুড়ে বসে থাকে এ নয়নাভিরাম নৌকার হাট। বছরের জৈষ্ঠ্য থেকে আর্শ্বিন মাস নৌকা বেচা-বিক্রির ধুম পড়ে যায় ওই হাটে। গত (০৪ জুলাই) শুক্রবার সকালে আটঘরের নৌকার হাটে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। এ হাটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে নৌকা বিকিকিনি। নৌহাট ঘুরে মনে হলো এ যেন নয়ণাভিরাম এক নৌকার মেলা।
নৌ-হাটটি প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার আটঘরের মানপাশা বাজার নিকটবর্তী খালে সূর্য ওঠার সাথে সাথে জমে উঠে নৌকার হাট। হাটে বেশির ভাগ নৌকাই আসে উপজেলার বলদিয়ার চামী, একতা ও পার্শ্ববর্তী নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া, বৈঠাকাটা গ্রাম থেকে। একসময় সুন্দরি কাঠ দিয়ে তৈরি হওয়া নৌকা এখন আর হাটে দেখা যায় না। তবে সুন্দরি কাঠের নৌকা দু-স্পাপ্র বিধায়, হাটের নৌকাগুলো তৈরী হচ্ছে চাম্বল, রেইনট্রি, মেহগনি, আমড়া সহ কড়াই কাঠ দিয়ে।
প্রতি হাটে প্রায় চার থেকে পাঁচ শতাধিক নৌকি বিক্রি হয় থাকে। আর লোকজন বিভিন্ন জায়গা থেকে সড়ক ও জলপথের বিভিন্ন যানবাহনে করে একসাথে অনেকটি নৌকা কিনে নিয়ে যাচ্ছে স্ব-স্ব গন্ত্যব্যে। বিল ও চরাঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার বিভিন্ন কাজে এসব নৌকা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে বাংলার আপেলখ্যাত কুড়িয়ানার বিখ্যাত পেয়ারা সংগ্রহ, চাঁই দিয়ে মাছ মারা, গো খাদ্য সংগ্রহ ও অত্র উপজেলার নার্সারী ব্যবসার বিভিন্ন কাজে বেশির ভাগ নৌকা বিক্রি হয়ে থাকে। যে দিকে চোঁখ যায় কেবল নৌকা আর নৌকা।
এক একটি নৌকা ২৫শ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। ঐতিহ্যবাহী নৌ-হাটকে কেন্দ্র করে উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ও বলদিয়া মোট দু‘টি ইউনিয়নের প্রায় ১২ টি গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান ঘটে থাকে।
নৌকা তৈরীর কারিগর উপজেলার ডুবি গ্রামের মো. সাহারুল ইসলাম (৫২) জানান, নৌকা তৈরীতে আগেরমত শাল, সেগুন, সুন্দরী কাঠ ব্যবহার হয় না। বর্তমানে চাম্বল, মেহগিনি, কড়াই, রেনট্রি, গুলাপ,আমড়া,বাদাম প্রভৃতি গাছের কাঠ দিয়ে নৌকা তেরী করা হয়।
একই ইউনিয়নের চামী গ্রামের নৌকা মিস্ত্রী মোশাররফ জানান, দেশী কাঠ দিয়ে একটি নৌকা তৈরী করতে দু’জন শ্রমিকের সময় লাগে একদিন। আর নৌকা তৈরির আকার ভেদে খরচ হয় ২ হাজার ৫’শ থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা।নৌ-হাটের দিন পাশাপাশি রাস্তার উপরে নৌকার হাটের পাশেই বসে নৌকার বৈঠার পশরা। নৌকার সাথে বেঠা বিক্রি হয়না বিধায় পাশেই আলাদাভাবে বসে থাকে বৈঠার দোকান। আমইর, আমড়া, গাভ, মেহগনি কাঠের বৈঠা বিক্রি হয় হাটে। একটি পাঁচ হাত সাইজের গাব কাঠের বৈঠা ২০০-২৫০টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।
নৌকার হাটকে কেন্দ্র করে রাস্তার পাশেই বসে থাকে ছোট ছোট টোং দোকান। সেসব দোকানে গোলগোল্লা, পিয়াজু দেশিয় বেকারী সামগ্রীর রুটি বিস্কুট বিক্রি হয়ে থাকে। হাটে আসা দর্শনার্থী ও বেপারীরা ওই সব দোকানে আনন্দসহিত খেয়ে থাকেন।
Leave a Reply