1. news@sadhinbanglanews24.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৩১ অপরাহ্ন

যশোর হাসপাতালের সামনে প্রতারণার ফাঁদ ফার্মেসি !

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫
  • ২০ বার

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরের চৌগাছা উপজেলার তজবীসপুর গ্রামের জামির হোসেন (৫০) পেটের ব্যথায় আক্রান্ত হলে বৃহস্পতিবার যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হলে সহায়তার নামে এক দালাল তার পিছু নেন। রোগীকে ওয়ার্ডে নেওয়ার পর দায়িত্বরত সেবিকা ওষুধ কেনার জন্য কাগজ দেন। রোগীর স্বজনরা ওই দালালের দেখানো ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে যান। কয়েকটি ওষুধ দিয়ে তার কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। সন্দেহ হলে অন্য একটি ফার্মেসিতে গেলে কাগজ দেখে ওষুধের দাম বলা হয় ৩৫০ টাকা। সিরাজসিংহা গ্রামের সাহেব আলীর স্ত্রী শাবানা বেগমও ওষুধ কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন। দেড়শ’ টাকার ওষুধ তার কাছ থেকে ১১শ’৫০ টাকা নেয়া হয়েছে। জেনারেল হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা কয়েকটি নামমাত্র ওষুধ ফার্মেসিতে রোগীর স্বজনদের সাথে এভাবে প্রতারণা করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, রোগীর স্বজনদের বোকা বানাতে প্রতারক চক্র হাসপাতালের ড্রাগ লিস্টের হুবহু কপি নিজেরা তৈরি করেছে। আবার অনেক সময় ওষুধের নাম লেখা সাদা কাগজে নিজেরা দামি ওষুধের নাম লিখে দেন। অথচ সেই ওষুধের দাম হাতানো হলেও ওষুধ দেয়া হয়না।

জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালকে ঘিরে সামনে গড়ে উঠেছে নামমাত্র এসব ওষুধ ফার্মেসি। অথচ সেখানে তেমন ওষুধপত্র নেই। ক্রেতাদের মন বোঝাতে র‌্যাকে সাজিয়ে রাখা হয় ওষুধের খালি খোলা। আর প্রয়োজন মত কিছু ট্যাবলেট , ইনজেকশন ও স্যালাইন নিচের র‌্যাকে রেখে দেয়া হয়। আর অধিকাংশ ওষুধপত্র অন্য দোকান থেকে এনে দেয়া হয়। ওই ফার্মেসি মালিকদের একে অপরের সাথে সুসম্পর্ক। প্রতারণার উপরেই তাদের ব্যবসা চলছে। প্রত্যেক ফামের্সির রয়েছে কমশিনে নিয়োগ করা দালাল। তাদের কাজ হল জেনারেল হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের কৌশলে ভাগিয়ে নিজদের ফার্মেসিতে আনা। এজন্য দালালরা বেশির ভাগ সময় অবস্থান করেন জরুরি বিভাগের সামনে। স্বজনরা রোগীকে জরুরি বিভাগে আনার সাথেই দালালরা তাদের কৌশল অনুযায়ী চিকিৎসককে ডাকা, ট্রলি ঠেলে দেয়া, ভর্তি টিকিট সেবিকাদের কাছে নিয়ে যাওয়া। এমনকি ওয়ার্ডে বিছানা পেতে দেয়ার কাজটাও দালালরা করে দেয়। এভাবে রোগী ও স্বজনদের সহানুভূতি আদায় করে নেয় দালালরা। এরপর সেবিকা ছোট কাগজে ওষুধ লিখে দেয়ার পর তারা রোগীর স্বজনকে ফার্মেসিতে ডেকে নিয়ে যায়। ওষুধের তালিকা ফার্মেসিতে বসে থাকা একজনের কাছে দিয়ে তড়িঘড়ি করে ওষুধ দিতে বলেন। ওষুধ নেয়ার পর স্বজনকে বলা হয় রোগীর অবস্থা ভালোনা। তাড়াতাড়ি ওষুধ নিয়ে চলেন। কিছু রোগীর স্বজনেরা সাথে সাথে টাকা দিতে চাইলেও দালাল ও ফার্মেসি মালিকেরা বলেন আরও ওষুধ লাগতে পারে। পরে একবারে টাকা পরিশোধ করে দিয়েন। এসময় ফার্মেসিতে ওষুধের তালিকার স্লিপ রেখে আসা হয়। ওই স্লিপ নিয়ে শুরু হয় ফার্মেসি ও দালালদের তেলেসমাতি। তারা স্লিপের ভেতরে কৌশলে দামি ওষুধের নাম লিখে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেয় ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যেসব ওষুধের নাম সাধারণত প্রতারকেরা স্লিপের মধ্যে সংযোজন করছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রফিসিন, ডরসিকম ১৫ এমজি, ট্রাকশন ৫ এমজি, সেফটিএক্সোন ২ গ্রাম, টিটাগাম ও আইভি ইনডেকেশন। তাদের খপ্পরে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সহজ সরল মানুষ। এভাবে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া টাকা ফার্মেসি মালিক ও দালালরা ভাগাভাগি করে নেয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের সামনে অবস্থিত একটি ফার্মেসিতে অ্যাপোনসেট নামে একটি বমির ওষুধ কিনতে যান ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সোহান। তার মা জবেদা বেগম হাসপাতালের মহিলা মেডিসেন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রতারণার মাধ্যমে ওই ওষুধের দাম নেয়া ১৯শ টাকা। যার প্রকৃত দাম হচ্ছে মাত্র ৬০ টাকা।

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের মাহবুর রহমান জানান, তার স্ত্রীর সিজারিয়ার অস্ত্রোপচারের জন্য একটি ফার্মেসি থেকে ওষুধ নেন। পরে তাকে হিসেব দেখানো হয় সাড়ে ৯ হাজার টাকা। মাহবুর রহমান অভিযোগ করেন অপারেশনের জন্য হাসপাতাল থেকে দেয়া মেডিসিন লিস্টের কাগজ ওই ফার্মেসীতে রেখে দেয়া হয়। টাকা পরিশোধ করার সময় তাদের হাতে যে মেডিসিন লিস্ট ধরিয়ে দেয়া হয় তা দেখে রীতিমত অবাক হন। তিনি ওই লিস্টটি আনেন ওয়ার্ডে। সেখানে দায়িত্বরত সেবিকাদের মাধ্যমে জানতে পারেন ওই লিস্টে যে ওষুধের নাম লেখা আছে তার অধিকাংশ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে লেখা নেই। পরে মাহবুর রহমান বিষয়টি এক সাংবাদিককে জানান। ওই সাংবাদিকের হস্তক্ষেপে ৪ হাজার ৬শ’ টাকায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।

চান্দুটিয়া গ্রামের শিপন নামে এক ব্যক্তি জানান, হাসপাতালের সামনের এক ফার্মেসী মালিক ৮শ’ টাকার ওষুধ দিয়ে আড়াই হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। পরে ধরাধরি করলে ১১শ’ টাকা ফেরত দেয়া হয় । এনায়েতপুর গ্রামের বাবু মন্ডল জানান, তার কাছ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকার ওষুধ ২ হাজার ৭শ’ টাকা নেয়া হয়। স্লিপে নিজেরাই কৌশলে ওষুধের লিখে বাড়তি টাকা আদায় করে।

নামমাত্র এসব ফার্মেসি মালিকদের কমিশনে নিয়োগ করা দালালরা রোগী ও স্বজনদের সহায়তার নামে প্রতারণা করে হাজার হাজার টাকা লুফে নিচ্ছে। দালালদের কেউ কেউ মাঝে মধ্যে পুলিশের হাতে আটক হলেও চক্র প্রধানরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য সোহেল রানা জানান, রোগীদের কাছ থেকে কৌশলে ওষুধের বাড়তি দাম নেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগী কেউ অভিযোগ করলে ফার্মেসি মালিক ও দালালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

আর্কাইভ

November ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Oct    
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০

স্বাধীন বাংলা নিউজ 24.com limited কর্তৃক প্রকাশিত।

Theme Customized By BreakingNews