যশোর প্রতিনিধি : যশোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ৩২ মামলার আসামি রমজান শেখ (৩৪) খুনের দেড় বছর পর খুন হয়েছেন ছোট ভাই সাগর শেখ (২৮)। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে খুলনার রুপসা সেতুর পূর্ব পাশে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে খুন করে। সাগর শেখ যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিম পাড়ার ফয়েজ আলী শেখের ছেলে।
রুপসা থানার এসআই সৌরভ দাশ জানান, রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রুপসার জাপুসা চৌরাস্তায় গুলির শব্দ শুনে আব্দুর রহমান নামে একজন
৯৯৯-এ ফোন করেন। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় রক্তাক্ত অবস্থায় সাগর শেখ পড়ে আছে। তার মাথায় ও হাঁটুতে গুলির চিহ্ন ছিল। তিনি গ্রিন বাংলা আবাসিক এলাকার পেছনে বসবাস করতেন।
রুপসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক মীর জানান, দুর্বৃত্তরা সাগর শেখকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়লে একটি গুলি তার মাথায় ও আরেকটি হাঁটুতে লাগে। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। খুনের নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। খুনের সাথে জড়িতদের আটকে অভিযান অব্যাহত আছে।
যশোর শহরের রেলগেট এলাকার একটি সূত্র জানিয়েছে, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের আশ্রিত মেহবুব রহমান ওরফে ম্যানসেলের শেল্টারে কুখ্যাত হয়ে ওঠে রমজান শেখ। বড় ভাই এলাকার ত্রাস হওয়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে ছোট ভাই সাগর শেখ। দুই ভাইয়ের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পরিধি বাড়তে থাকে। মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, খুন, জখম চালাতে থাকে ফ্রি-স্টাইলে। ২০২৪ সালের ৮ মার্চ রাতে
আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি রাজার নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা রেলগেট কলাবাগান এলাকায় হামলা চালিয়ে
রমজানকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। দুর্বৃত্তদের পরবর্তী টার্গেট ছিল তার ছোট ভাই সাগর। যে কারণে তিনি খুলনায় আত্মগোপনে ছিলেন।
গ্রিন বাংলা আবাসিক এলাকায় জমি কিনে বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন। চলতি বছরের ১৬ মে র্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে সাগর শেখকে গ্রেফতার করে। জামিনে বের হয়ে ফের ওই এলাকায় বসবাস শুরু করে। রমজানের খুনিরা সাগরকে খুন করতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
স্বজনরা জানিয়েছেন, রমজান ও সাগর খানকে ক্ষমতাসীনরা ব্যবহার করত। ম্যানসেলের নির্দেশে নানা অপরাধ করেছে। সুযোগ বুঝে
প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা দুই ভাইয়ের জীবন কেড়ে নিয়েছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন জানান, রেলগেট এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগর খান খুলনার রুপসায় খুন হয়েছে বলে শুনেছি। সাগরের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, বিস্ফোরক, অস্ত্র, মাদকসহ ১৯ টি মামলা রয়েছে।
এদিকে, সাগরের ভাই রমজানকে যখন হত্যা করা হয়, তখন পুলিশের হিসেবে থানায় ৩২টি মামলা ছিল। ২০১১ সালে প্রথম তিনি চাঁদাবাজি ও মারপিটের মামলার আসামি হন। এরপর ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র বহন ও হত্যার নানা অভিযোগে আরও ৩১টি মামলা হয়। এরমধ্যে হত্যার অভিযোগে ২টি , অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে ৭টি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৬টি, বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৫টি, ছিনতাই ও ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগে ৪টি, মারপিটের অভিযোগে ৬টি ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ১টি মামলা উল্লেখযোগ্য।
Leave a Reply