কাগজ ডেস্ক: দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে বিএনপি। দেশব্যাপী নানা বিশৃঙ্খলার ঘটনায় কঠোর অবস্থান নেয় দলটি। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তা কাজে আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটির হাইকমান্ড।
বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সামান্যতম সম্পৃক্ততার খবর পাওয়া মাত্রই নেওয়া হচ্ছে শক্ত পদক্ষেপ। বেশ কয়েকজন নেতার পদ স্থগিত, পদাবনতি এমনকি বহিষ্কারও করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাদ যাননি দলটির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাও।
দলের নীতি-নির্ধারকরা জানিয়েছেন যেকোনো মূল্যে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর তারা। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দলের নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ দখল, চাঁদাবাজি, হুমকি-ধমকি, মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি থেকে শুরু করে কোনো ধরনের অপকর্ম করে, তবে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিদিনই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং খোঁজখবর রাখছেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন।তাদের ভাষ্য, গত ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
তারেক রহমান সার্বক্ষণিক এসবের খোঁজ রাখছেন। সঙ্গে এ-ও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে তিনি কোনো ছাড় দেবেন না। তাই সে যত বড় নেতা বা তার ঘনিষ্ঠ হোন না কেন।দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী থেকে শুরু করে সারা দেশ, সর্বত্রই কঠোর দৃষ্টি রাখছেন তারেক রহমান। রেখেছেন শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থাও।
তারই অংশ হিসেবে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই র্যাপিড অ্যাকশনে যাচ্ছে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর। পাশাপাশি প্রমাণ মিললে করা হচ্ছে বহিষ্কার, না হয় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে শোকজ লেটার। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কিংবা জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতা, কেউই এ তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেন না।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে দলের কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, এ পর্যন্ত কয়েকশ’ নেতাকে দলীয় পদে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে কোনো অভিযোগ এলে আমরা সেটি আমলে নিয়ে যাচাই-বাছাই করছি। ন্যূনতম কোনো সংশ্লিষ্টতা পেলেই তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে। প্রমাণিত হলে বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হচ্ছে। পদ-পদবি স্থগিত করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। যত বড় নেতাই হোন না কেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি আমাদের দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ কেউ ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে প্রশাসন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খবরদারি করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবরদারি সম্পর্কে সচেতন থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে সচেতন থাকার অনুরোধ করছি। কারণ এ সব ব্যক্তিরা কেউই বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করে না।
দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দীর্ঘদিনের একজন কর্মীকে তো সহজেই কেউ দল থেকে বহিষ্কার বা তার সদস্যপদ স্থগিত করতে চায় না। যখন একজন নেতা বা কর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ প্রদান করা হয়, তখন সবকিছু দেখে-শুনে এবং জেনে-বুঝে যৌক্তিকভাবেই সেটা দেওয়া হয়। যা অন্যদের জন্য একটা সতর্ক সংকেত। আশা করি, এতে অন্যরা সাবধান হবেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। যে-ই শৃঙ্খলা ভঙের চেষ্টা করবেন, তার বিরুদ্ধেই সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দলের বাইরে থেকেও অনেকে ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
দলের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এইচ এম সাইফ আলী খান গণমাধ্যমকে বলেন, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। সবচেয়ে বেশি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর শাখা। কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, দলে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে এবং শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমানের নির্দেশে দেশের নতুন প্রেক্ষাপটের শুরু থেকেই গঠনমূলক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বিএনপি।
Leave a Reply