1. news@sadhinbanglanews24.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৩৮ অপরাহ্ন

কালীগঞ্জের সরকারী জলাশয়গুলো কচুরিপানা ও অবৈধ দখলকারদের দখলে

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৫
  • ১১ বার
রাফসান জনি কালীগঞ্জ ঝিনাইদহ ।।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা উপর দিয়ে বয়ে গেছে চিত্র, ভৈরব নদ ও বেগবতি এই তিন নদী। এসব নদ-নদীসহ বিভিন্ন উন্মুক্ত জলাশয়ে ব্যাপকভাবে জন্মানো কচুরিপানা আর পলিমাটির কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব নদি সংলগ্ন উপজেলার অধিকাংশ খাল অবৈধ দখল ও বিস্তরভাবে জন্মানো কচুরিপানায় পরিপূর্ণ। কচুরিপানার সঙ্গে পলিমাটি জমে একাকার হয়ে এসব জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে বিচরন ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জলাশয়গুলো দ্রুত দখলমুক্ত ও পরিস্কার করে পানি চলাচল স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন এই এলাকার সাধারণ মানুষ।  কচুরিপানা, পলি, শ্যাওলার গাদ অপসারণ না করা হয় তাহলে আগামী বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ বিপর্যায়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। উন্মুক্ত জলাশয়গুলোতে বিস্তরহারে জন্মানো কচুরিপানা বংশ বিস্তার বন্ধ  না করা যায় তাহলে পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাশাপাশি বিলুপ্ত হবে দেশীয় প্রজাতির মাছ।
ঝিনাইদহ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ভৈরব নদ, চিত্রা ও বেগবতি ৩টি নদী এবং নদি সংলগ্ন ৪৫টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে কালীগঞ্জ পৌরসভার মধ্যে অফদা খাল, নলডাঙ্গা রাজবাড়ির গুঞ্জনগর শশ্মানঘাট খাল, তৈলকূপী মামু খাল, কত্যার খাল, দীঘারপাড়া তত্তিপুর খাল, বলরামপুর কুল্টিখালীর শিরিষকাট খাল, কাশীপুর খাল এবং পাতিবিলা খাল অন্যতম। এছাড়া বাওড় রয়েছে ৫টি, এগুলো হলো-মর্জাদ বাওড়, মাজদিয়া, বারফা, চাঁদবা ও শিমলা বাওড় রয়েছে। বিল রয়েছে ৬টি, এগুলো হলো-সাকোর বিল, উত্তর বিল, দিঘার বিল, অরুয়া সালভা বিল এবং তেতটুল বিল।উপজেলার বকেরগাছি এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, বাপ দাদাদের মুখে শুনেছি দেড়শ’ বছর আগেও কচুরিপানা নামক এই জলজ উদ্ভিদ কেউ চিনতো না। আগের দিনে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে জলাশয় দখলমুক্ত এবং দেশী প্রজাতির মাছ বাঁচাতে আইন প্রণয়নসহ উন্মুক্ত জলাশয়ের কচুরিপানার বিস্তার রোধে এলাকায় কমিটি গঠন করতো ঐ সময়ের প্রশাসকরা। অনেকেই মনে করছেন বর্তমানে অত্যধিক হারে অবৈধ দখলদাররা নদির দু’পাশ দখল করে নিয়ে বিভিন্ন আবাদ করে এক সময়ের খরস্রোত নদীগুলোকে সংকুচিত করে ফেলেছে। আর কচুরিপানার যে পরিমাণে বিস্তার লাভ করেছে তাতে পরিবেশ এবং জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে। উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও খাল-বিলসহ উন্মুক্ত জলাশয় কচুরিপানায় পরিপূর্ণ হওয়ায় পানি প্রবাহে অন্যতম বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কচুরিপানা বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিতি যেমন, পট, শ্যাওলা, কেউটে ইত্যাদি। সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে অধিকাংশ জলাশয় দখল এবং কচুরিপানায় পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় এসব কোনো জলাশয় নয়, এ যেন শুকনো চারণভূমি। কচুরিপানায় এসব জলাশয়ে পানিপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় জেগে উঠেছে চর। কচুরিপানায় পূর্ণ হওয়ায় জলাশয়ে অক্সিজেন সংকটে মাছসহ জলজ জীব-বৈচিত্রে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফলে এসব জলাশয় হতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহকারী মৎস্যজীবি, মাগদি, জেলে ও মালো স¤প্রদায়ের মানুষ পড়েছে বেকায়দায়।উপজেলার তৈলকূপী গ্রামের আব্দুল কুদ্দুচ, মানিক কুমার, বাদল কুমার, সাইফুল, শিপলু হোসেন ও জাকির হোসেনসহ একাধিক মৎস্যজীবি জানান, আমরা বাপ দাদার আমল থেকে মাছ মেরে জীবিকা নির্বাহ করি। এখন পট কচুরিপানা ও শ্যাওলার কারণে আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। অচিরেই এই জলজ উদ্ভিদ জাতীয় আগাছা নিমূল এবং দখলমুক্ত না করা গেলে এসব জলাশয় সম্পূর্ণ নাব্যতা সংকটে পড়বে। কচুরিপানা আর শ্যাওলা পচে গিয়ে গাদের সৃষ্টি হয়। আর এসব গাদ জলাশয়ের তলদেশে গিয়ে ভরাট হয়ে জলাশয়গুলো রূপ নেবে চারণভূমিতে। তখন আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।
উপজেলার কাষ্ঠভাঙ্গা ইউনিয়নের মর্জাদ বাওড় পাড়ের মালো স¤প্রদায়ের লক্ষণ, নারায়ন, নারদ, বকুলসহ একাধিক মৎস্যজীবিরা জানান, কয়েক বছর হলো বাওড়ের দু’পাশে কচুরিপানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এ কারণে বাঁওড়ের প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো দেশীয় প্রজাতির মাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। কচুরিপানার আবর্জনায় বাওড়ের নিচের স্তরে জমে ও দু’পাশ থেকে ভরাট হয়ে বাওড় ছোট হয়ে আসছে। এসব কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানি না উঠলে দেশীয় প্রজাতির মাছ জন্মায় না। আমরা মাছ সংকটের আশঙ্কা করছি।   কালীগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ী, সমাজ সেবক ও প্রবীণ সাংবাদিক আনোয়ারুল ইসলাম রবি বলেন, চিত্রা নদি ধ্বংসের ভয়াবহ চিত্র এখনই দেখা যাচ্ছে। এক সময়ের খরস্রোত চিত্রা নদিটা অবৈধ দখলদারদের দখল উৎসব, কচুরিপানা ও পলিমাটিতে পরিপূর্ণ হয়ে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। উপজেলার নদ-নদী ও খালগুলো এভাবে দখল ও ময়লা আর্বজনায় ভরাট হয়ে গেলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ সংকটের আশঙ্কা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে যদি পানি ঠিকমত নিষ্কাশিত না হয় তাহলে গোটা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। ফলে দ্রুত এই জলাশয়গুলো অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের পাশাপাশি খনন, কচুরিপানা ও পলিমাটি অপসারণ করা প্রয়োজন।
উপজেলা পরিবেশবাদি শিবু পদ বিশ্বাস বলেন, জলাশয়গুলো সরকারি উদ্যোগে আগে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও খনন কাজ করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করতে হবে। পানি প্রবাহ চলমান থাকলে কচুরিপানা জন্মাতে পারে পারে না। নদী এবং খালে পানির স্রোত থাকতে হবে তাহলে কচুরিপানা বা পলি জমতে পারে না। মাছের এবং পরিবেশেরও কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। আর বাওড় এবং বিলের কচুরিপানা বা অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ সম্মিলিত উদ্যোগে পরিস্কার করতে হবে কিন্তু বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এসব কাজের কোন উদ্যোগ লক্ষণীয় নয়। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে পরিবেশ এবং দেশীয় প্রজাতির মাছ খুব দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ সব সমস্যা সমাধোনে আমি আপনাদের মাধ্যমে সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী (অঃদাঃ) রঞ্জন কুমার দাস এ প্রতিনিধিকে জানান, আমদের কাজ সাধারণত জেলার জলাশয় দখলমুক্ত, খনন করা। আর কচুরিপানা পরিস্কারের জন্য আমাদের নির্দিষ্ট কোন বাজেট বরাদ্দ থাকে না। যদি কচুরিপানা পরিস্কারের কোন বরাদ্দ আসে তাহলে ব্যবস্থা নিবো। কচুরিপানা পরিস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। জেলার জলাশয় দখলদারদের উচ্ছেদ কাজ আমাদের চলমান রয়েছে

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

আর্কাইভ

January ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Dec    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  

স্বাধীন বাংলা নিউজ 24.com limited কর্তৃক প্রকাশিত।

Theme Customized By BreakingNews