মিজানুর রহমান, যশোর ॥
যশোর সদরের চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ একই বাদীর ৩ মামলা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে গোটা এলাকা জুড়ে। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে একের পর এক মিথ্যা মামলা ফাঁসানো হচ্ছে বলে ইউপি সদস্যের দাবি। এদিকে মামলা করার পর থেকে অনেকটা আত্নগোপনে রয়েছে মামলার বাদী লিমন চাকলাদার। ধর্ষনসহ তিনটি মামলা করার বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তুলে ধরা হলো
সরেজমিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, লিমন চাকলাদার দীর্ঘদিন ওমানে ছিলেন। দেশে থাকতেই একই গ্রামের ইউপি সদস্য কাইয়ূম হোসেন দিপুর পরিবারের সাথে লিমনের পরিবারের বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি লিমন চাকলাদার বিদেশ থেকে বাড়িতে আসার পর তাদের মধ্যে বিরোধ আরো প্রকট আকার ধারণ করে। বিদেশ বসেই ফন্দি আটেন লিমন চাকলাদার দিপুকে শায়েস্তা করার জন্য। কৌশলে লিপনের ভাইপো আলিফকে লেলিয়ে দেয়া হয় দিপুর বিরুদ্ধে। আলিফ তখন থেকেই ইউপি সদস্য দিপুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা কথা প্রচার করতে থাকে এলাকায়। যাতে দিপুর ব্যাপক সম্মানহানি ঘটে। এসব কিছুর প্রতিবাদ করলে ফুঁসে উঠেন লিমন ও তার ভাইপো আলিম।
দিপুকে শায়েস্তা করতে শুরু করেন লিমন নতুন কৌশল।১০/১১/২৪ তারিখে দিপুর বিরুদ্ধে লিমন বাদী হয়ে করেন প্রথম ডাকাতি মামলা। এরপর ২২/১২/২০২৪ তারিখে পুনারায় লিমন বাদী হয়ে দিপুর বিরুদ্ধে আরেকটি চাঁদাবাজি মামলা করেন।এতকিছুর পরও দিপুকে শায়েস্তা করতে না পেরে স্ত্রীকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করে করেন ধর্ষন মামলা। যে মামলারও বাদী লিমন নিজেই।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে,স্ত্রীর অনইচ্ছায় লিমন এই ধর্ষন মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলা দায়ের করার পর থেকে লিমনের স্ত্রীর সাথে কারোর কোন কথা বলতে দিচ্ছেন না লিমন। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলার প্রতিবাদ করায় লিমন তার স্ত্রীকে মারপিট করছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, লিমনের ভাইপো আলিফ কম্পিউটারে বেশ কিছু খারাপ ছবি এডিট করে দিপুর। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য কাইয়ূম হোসেন দিপু বলেন, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে একে একে ৩ টা মিথ্যা মামলা করেছে লিমন।ইতিমধ্যে একটি মামলায় পুলিশ আমারসহ মামলার বাদী লিমনকে ডাকলেও সঠিক প্রমানাদি দেখাতে না পারার ভয়ে পরপর দু’বার ডাকার পরও সে হাজির হয়নি।তিনি আরো বলেন, সঠিক তদন্ত করলে আমাকে নির্দেশ প্রমান হবো।
সরেজমিন কথা হয় এলাকার সবচেয়ে প্রবীন ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকে সাবেক মূখপত্র জি এম আবুল কালাম আজাদের সাথে। তিনি জানান, দিপু একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান।ডাকাতি বা চাঁদাবাজির মত ঘটনার সাথে সে কখনো জড়িত থাকতে পারেনা।তিনি প্রশাসণের নিকট সঠিক তদন্তপূর্বক সত্য উদঘাটনের অনুরোধ জানান।
অপর প্রবীন ব্যক্তি ফজলুর রহমান মুন্সি বলেন, দিপুর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা করে চলেছে লিমন।তিনি আরো বলেন, লিমনের বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।
আতিয়ার রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান,দিপুর মত একজন ভালো ছেলে আমাদের ওর্য়াডে হয়না। মূলত রাজনৈতিক ভাবে তার নিকট পরাজিত হয়ে একটি মহলের ইন্ধনে তার নামে লিমন মিথ্যা মামলা করছে।আমরা গ্রামবাসী এর সঠিক তদন্ত চাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মহিলা জানান, লিমনের স্ত্রী ও দিপুর মধ্যে যে কোন খারাপ সম্পর্ক নেই যা লিমনের স্ত্রী আমার সাথে নিজেই বলেছেন। তিনি আরো জানান,মামলা দায়ের করার পর প্রতিবাদ করলে লিমন চাকলাদার তার স্ত্রীকে বেদম মারপিট ও করেছে। সত্যি কথা প্রকাশ করে দেওয়ার ভয়ে লিমন চাকলাদার তার স্ত্রীকে এক প্রকার নিজ বাড়িতে আটকে রাখার মত রেখেছেন। তার সাথে কারো কোনো কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।
শুধু মাত্র নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য লিমন দিপুর বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ ডাকাতি ও চাঁদাবাজির ৩ টা মামলা দায়ের করেছেন। পরপর ৩ টা মামলা করায় এলাকাবাসী রীতিমত হতবাক হয়েছেন।
এদিকে মামলার বিষয়ে লিমনের বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হয়নি। এমনকি তার স্ত্রীর সাথেও কথা বলা যাবে না সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
Leave a Reply